Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মাঠের ধান ফসল ইঁদুর থেকে রক্ষার আধুনিক প্রযুক্তি

ইঁদুর এক পরিচিত স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং সবচেয়ে পুরনো মেরুদ-ী বালাই যা মানুষের সাথে নিবিড়ভাবে সহাবস্থান করে। ইহা আমাদের বিভিন্ন ফসল যেমন- ধান, গম, ভুট্টা, সরিষা, বিভিন্ন ফল ও শাকসবজির ক্ষতি করছে, গুদামজাত শস্যে মলমূত্র ও লোম সংমিশ্রণ করছে, আমাদের বাসাবাড়ির আসবাবপত্র, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, জামা-কাপড়, বিছানাপত্র এবং বিভিন্ন স্থাপনার ক্ষতি করছে, পাশাপশি বাঁধ, রেললাইন, জাহাজ, বন্দর,   মাতৃসদন, এরোপ্লেন, সেচের নালাসহ সর্বত্র ইঁদুরের বিচরণ রয়েছে। এক কথায় কোন সম্পদই ইঁদুরের হাত থেকে রেহাই পায় না। বিভিন্ন রোগের ধারক এবং বাহক হিসেবে ইঁদুর মানুষ ও গবাদিপশুতে মারাত্মক রোগ বালাই ছড়াচ্ছে। পোকা মাকড়ের তুলনায় ইঁদুর নিয়ন্ত্রণ করা আপাতত খুব কঠিন মনে হলেও অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় সঠিক জ্ঞান এবং কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ইহার সংখ্যা লাগসইভাবেই কমিয়ে আনা সম্ভব। ইঁদুর দ্বারা ফসলের যে ক্ষতি  হয় তা কমানো গেলে একদিকে যেমন খাদ্য নিরাপত্তা  নিশ্চিত হবে আবার অন্যদিকে আয়ও বাড়বে।  

 

ইঁদুর দ্বারা প্রাথমিক ক্ষতি হয় ধান, গম, বাদাম ও নারিকেল ফসলে। অন্যান্য ফসল যেমন- আলু, ডাল, সবজি, ফলমূলেরও ক্ষতি  করে। এশিয়ায় ফসল কর্তনের পূর্বে শতকরা ৫-১০ ভাগ ক্ষতি হয়। পাঁচ ভাগ ক্ষতি ধরা হলে এর পরিমাণ হয় প্রায় ৩৫ মিলিয়ন টন ধান যা উন্নয়নশীল দেশের ২৮০ মিলিয়ন মানুষের এক বছরের খাবারের সমান। ফিলিপাইনে উৎপাদিত ধানের ২০ শতাংশ ইঁদুর খেয়ে ফেলে ও নষ্ট করে। লাওসে এ ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫ শতাংশ (ইরি)। বাংলাদেশে ইঁদুরের আক্রমণে বৃষ্টিনির্ভর ও সেচ সুবিধাযুক্ত ধানের জমিতে ফসল কাটার পূর্বে শতকরা ৫-১৭ ভাগ ক্ষতি হয়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় জলী আমন ধান (শতকরা ৩২-৩৭ ভাগ)।

 


বিভিন্ন ধরনের ইঁদুরের মধ্যে কালো ইঁদুর, মাঠের বড় কালো ইঁদুর, নরম পশমযুক্ত মাঠের ইঁদুর ও ছোট লেজযুক্ত ইঁদুর ধানের ক্ষতি করে। এদের মধ্যে কালো ইঁদুর মাঠে ও গুদামে এবং মাঠের বড় কালো ইঁদুর নিচু জমিতে বেশি আক্রমণ করে।
 

ইঁদুরের বাসস্থানসমূহ
মাঠের কালো ইঁদুর ও মাঠের বড় কালো ইঁদুর গ্রীষ্ম মৌসুমে সাধারণত ফসলের ক্ষেত ও গ্রামের বিভিন্ন স্থানে গর্তে থাকে এবং গর্তের মুখ বন্ধ রাখে ও মাটি স্তূপ করে রাখে। একটি গর্তে একটি মাত্র ইঁদুর থাকে। বর্ষার সময় নি¤œভূমি প্লাবিত হলে এবং ফসলের জমিতে বৃষ্টির পানি জমলেই ইঁদুর গিয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচু স্থানে আশ্রয় নেয়। জমিতে পানি থাকে বলে ইঁদুর মাঠের উঁচু স্থানে, রেল সড়ক ও মহাসড়ক, উঁচু গ্রামীণ সড়ক, বেড়িবাঁধ, পুরোনো স্থাপনা, পুকুরের পাড়ে এবং ধানের জমির পাশে কচুরিপানার দলে অল্প জায়গায় অবস্থান করে।
এ অবকাঠামোগুলো কাটাকাটি করে ইঁদুর বাসা তৈরি করে। ফলে বেড়িবাঁধগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় জোয়ার এবং বন্যার পানি ফসলের মাঠ ও গ্রামীণ সড়ক ডুবিয়ে দিয়ে মারাত্মক ক্ষতি করে।

 

ধান ফসলে ইঁদুরের ক্ষতি
সাধারণত আগাম পরিপক্ব ধানের জমিতে ইঁদুরের আক্রমণ বেশি হয়। ইঁদুর ধান গাছের কুশি তেঁরছা কোণে (৪৫ ডিগ্রি) কেটে দেয়। গাছে শীষ বের হলে শীষ বাঁকিয়ে নিয়ে কচি ও পাকা শীষগুলো কেটে দেয়। ধান পাকলে ধানের ছড়া কেটে মাটির নিচে সুড়ঙ্গ করে জমা রাখে। ইঁদুর ধান ফসলে তিন মৌসুমেই আক্রমণ করতে পারে। তবে আমন মৌসুমে নিরাপদ আশ্রয়স্থল, পর্যাপ্ত খাদ্য এবং পানি সহজলভ্য হওয়া এবং মৌসুমের শেষভাগে বৃষ্টিপাত কম ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ সময়ে ইঁদুরের প্রজনন খুব বেশি হয়। ফলে ইঁদুরের সংখ্যা অন্যান্য মৌসুমের তুলনায় বেড়ে যায়। ইঁদুরের প্রজনন শুরুর পূর্বেই ইঁদুর নিধন করা দরকার। তাই আমন মৌসুমে ইঁদুর দমনের উপযুক্ত সময় ভাদ্র থেকে মধ্য কার্তিক। কারণ এ সময়ে মাঠে ইঁদুরের সংখ্যা কম থাকে। মাঠে প্রচুর খাদ্য না থাকায় ইঁদুর সহজেই এ সময় বিষটোপ খেয়ে থাকে। আমন ফসল ক্ষতি করার আগেই ইঁদুর মারতে পারলে এদের সংখ্যা বৃদ্ধি কম হয় এবং  ফসলের ক্ষতিও অনেক কম হয়ে থাকে। ধান রোপণের সময় ও রোপণের ৪৫-৫০ দিনের মধ্যে ধানের জমি ও আশপাশের এলাকার ইঁদুর দমনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

 

ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা
ইঁদুরের ক্ষয়ক্ষতির ধরন, এর ব্যাপকতা ও দমন প্রক্রিয়া অন্যান্য বালাই থেকে সম্পূর্ণ আলাদা ও কৌশলগত। তাই স্থান কাল পাত্রভেদে কৌশলের সঠিক ও সমন্বিত দমন পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ইঁদুর দমন করতে হবে। এতে করে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি, ইঁদুর বাহিত রোগ ও পরিবেশ দূষণের মাত্রা কমানো সম্ভব হবে। তবে ইঁদুরকে সঠিকভাবে মোকাবিলা করার জন্য সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসা একান্ত প্রয়োজন। এককভাবে ইঁদুর  দমন ফলত খুব বেশি কার্যকর হয় না। সবাই মিলে একযোগে বেশি জায়গার ইঁদুর মারলে ফসল রক্ষা পায় ও ইঁদুরের সংখ্যা পরবর্তীতে বাড়তে পারে না। এজন্যই প্রতি বছর সরকারিভাবে ইঁদুর নিধন অভিযান পরিচালনা করা হয়ে থাকে এবং সচেতনতা বাড়িয়ে এটাকে সামাজিকভাবে আরো অংশগ্রহণমূলক করতে হবে। গ্রামে, শহরে, জমিতে সর্বত্রই একযোগে ইঁদুর  নিধন করতে হবে। যৌথভাবে এলাকাভিত্তিক ইঁদুর দমন করলে একক খরচ কমার পাশাপাশি সামগ্রিক ফলাফল দৃশ্যমান হয়। এশিয়া এবং আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে পরিবেশসম্মত ইঁদুর দমন ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বর্তমান সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনার ধারণার ওপর ভিত্তি করে এটি পরিচালিত হচ্ছে। এখানে নিরাপত্তা, আর্থিক লাভ এবং স্থায়ী দমন ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়। আমাদের দেশে ইঁদুর দমন পদ্ধতিকে       প্রধানত  তিন ভাগে ভাগ করা যায়। ১) অরাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন ২) রাসায়নিক পদ্ধতিতে দমন এবং ৩) জৈবিক পদ্ধতিতে দমন।  

 

অরাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন  
অরাসায়নিক পদ্ধতি হলো ভৌত ও যান্ত্রিক কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে ইঁদুরের আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাখা, যেমন-
*গর্ত খুঁড়ে ইঁদুর বের করে মেরে ফেলা ।
*ইঁদুরের গর্তে পানি ঢেলে এবং মরিচের ধোঁয়া দিয়ে ইঁদুর বের করে মেরে ফেলা।
*জমির আইল চিকন (যেমন ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি), আগাছা এবং আবর্জনা ময়লা মুক্ত রাখা।
*বাঁশের, কাঠের, লোহার ও মাটির তৈরি বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ ব্যবহার করা। যেমন- কেচিকল (করষষ ঃৎধঢ়), বাঁশের কল, বাঁশের ফাঁদ, জীবন্ত ইঁদুর ধরার ফাঁদ, মাটির ফাঁদ, মাটির চিটাগুড়ের ফাঁদ, তারের ফাঁদ। ধানের জমিতে ইঁদুর দমনের ক্ষেত্রে জীবন্ত ফাঁদ (ষরাব ঃৎধঢ়) সবচেয়ে কার্যকর। ফাঁদে টোপ হিসেবে শামুকের মাংস, ধান, নারিকেলের শাঁস, কলা ও শুঁটকি মাছ ব্যবহার করলে ইঁদুর বেশি ধরা পড়ে। তাছাড়া  ধান বা চালের সাথে নারিকেল তেল টোপ হিসেবে ব্যবহার করলে বেশ কার্যকরী ফলাফল পাওয়া যায় । ব্যাপকভাবে ফাঁদ ব্যবহার কষ্টসাধ্য হলেও ইহার মাধ্যমে ইঁদুরের সংখ্যা দ্রুত কমিয়ে আনা যায়। প্রত্যেক দিন এক বৃহৎ এলাকাজুড়ে ফাঁদ পাততে হবে এবং এটি বেশ কয়েক দিন অব্যাহত রাখতে হবে। ফাঁদ যেহেতু দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবহার করা যায়, তাই বার বার রাসায়নিক বিষ ক্রয়ের তুলনায় খরচ কম হয় । কেচিকল দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায় এবং রাসায়নিক ব্যবহরের তুলনায় সাশ্রয়ী।
*কার্ডবোড (৩০ী৩০ সেমি), কাঠ বা লোহার সিটে ইঁদুরের আঠা মাখিয়ে আক্রান্ত ধানের জমিতে ইঁদুরের চলাচলের রাস্তায় পেতে রাখলে ইঁদুর আটকে মারা যায়।
*ধান কাটার পর উন্মুক্ত ফেলে না রেখে দ্রুত বস্তাবন্দি করতে হবে।
*একই এলাকার ধান ফসল একই সময়ে লাগানো ও কর্তন করা।
*পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রেখে ইঁদুরের প্রকোপ কমানো যায়। বাড়ি-ঘর ও ধান ক্ষেতের আশপাশের ঝোপঝাড়, জলাশয়ের কচুরিপানা পরিষ্কার রাখা।
*ধান ক্ষেতের চারদিকে এক মিটার উচ্চতায় পলিথিন দ্বারা ঘিরে দিয়ে ইঁদুরের আক্রমণ প্রতিরোধ করা।  
* বিভিন্ন যান্ত্রিক উৎপীড়ক (রিপেলেন্ট) যেমন- জমিতে ভিডিও ফ্লিম টানিয়ে, মানুষের প্রতিকৃতি জমিতে দিয়ে অথবা আলট্রা শব্দ সৃষ্টি করে জমি থেকে ইঁদুরকে সাময়িক সরিয়ে রাখা যায়। ইঁদুর তাড়ানোর নতুন পদ্ধতি হিসেবে আমন ধান ক্ষেতে পলিথিনের ঝা-া উড়িয়ে সুফল পাচ্ছেন অনেক এলাকার  কৃষক। বাতাসের কারণে পলিথিন পৎ পৎ শব্দ করে উড়ে আর ইঁদুর মনে করে কেউ আসছে, তাই ভয়ে পালিয়ে যায়। অবশ্য বায়ুপ্রবাহ মন্থর হলে কৌশলটি ভালোভাবে কাজ করবে না। বেশি সময় ধরে একই উৎপীড়ক ব্যবহার করলে উহার কার্যকারিতা কমে যায়।

 

ফাঁদ ফসল (Trap Crop) চাষ করে ইঁদুর দমন
আগে পাকে এমন স্বল্প জীবনকালের ধান(যেমন ব্রি ধান ৬২) চাষ করে ইহাকে ফাঁদ ফসল হিসেবে ব্যবহার করে ইঁদুর দমন করা যায়। এমন একটি কার্যকর ফাঁদ কৌশল হলো ট্র্যাপ ব্যারিয়ার সিস্টেম (ঞৎধঢ় ইধৎৎরবৎ ঝুংঃবস) যা ধানের জমিতে ব্যবহার করা যায়। একটি টোপ (ষঁৎব) ফাঁদ ফসল (আগাম পাকে) চাষ করে ইঁদুর ঢুকতে না পারে এরকম বেড়া দিয়ে এটাকে ঘিরে দিয়ে বেড়ার মাঝে মাঝে ফাঁদ তৈরি করে ফাঁকের ভেতরের দিকে এক সাথে অনেক ইঁদুর ধরা পড়ে এ রকম জীবন্ত ফাঁদ পেতে রাখতে হবে। ইঁদুর খাবারের আকর্ষণে ফাঁদ দিয়ে ভেতরে ঢুকার চেষ্টা করলে ধরা পড়বে। এই পদ্ধতির সফলতা পেতে হলে কাছাকাছি  সময়ে (১৫ দিনের মধ্যে) আশপাশের সকল কৃষক  জমি লাগাতে হবে এবং বেড়ার টোপ ফসল আগাম পাকতে হবে। এই টোপ ফাঁদ বেড়া পদ্ধতি তৈরি করতে যে খরচ হবে তা সকল কৃষক ভাগ করে নিবে। কোনো এলাকায় প্রতি বছর ইঁদুরের দ্বারা ১০ ভাগের বেশি ক্ষতি হলে ট্র্যাপ ব্যারিয়ার সিস্টেম গ্রহণ করা দরকার।
রাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন  
রাসায়নিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমনে তিন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য যেমন- ১) একমাত্রা বিষটোপ ২) দীর্ঘমেয়াদি বিষটোপ এবং ৩) বিষ গ্যাসবড়ি ব্যবহার করা হয়

১) একমাত্রা বিষটোপ
ইঁদুর একবার খেলেই সঙ্গে সঙ্গে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মারা যায়। এরূপ সর্বাধিক পরিচিত বিষটোপ হচ্ছে গমে মিশ্রিত জিংক ফসফাইড(<২%)। এটি ব্যবহারের কৌশল হলো জিংক ফসফাইড ছাড়া শুধু গম কয়েকদিন দিয়ে অভ্যাস করে হঠাৎ একদিন জিংক ফসফাইড মিশ্রিত গম প্রদান করা। এক্ষেত্রে সমস্যা হলো বিষটোপ লাজুকতা দেখা দিতে পারে যদি মৃত ইঁদুরগুলো সরিয়ে ফেলা না হয়। বিষটোপ লাজুকতা হলো-  বিষটোপ খেয়ে ইঁদুর মরে পড়ে আছে, এটা দেখে জীবিত ইঁদুরের ঐ বিষটোপের প্রতি খাওয়ার অনিহা।

 

২) দীর্ঘমেয়াদি বিষটোপ (Anticoagulant)
ইঁদুর খেলে সঙ্গে সঙ্গে  মারা যায় না। ইঁদুরের শরীরে বিশেষ প্রতিক্রিয়া হয় এবং কিছুদিন অর্থাৎ ২ থেকে ১৪ দিন পর মারা যায়। এক্ষেত্রে ল্যানির‌্যাট, স্টর্ম, ব্রমাপয়েন্ট, ক্লের‌্যাট ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়। দীর্ঘমেয়াদি বিষটোপ রক্তের জমাট বাঁধার প্রক্রিয়াকে ব্যহত করে। ফলে ইঁদুরের দেহে সৃষ্ট বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ ক্ষতের জন্য অনবরত রক্তক্ষরণ হতে থাকে এবং ধীরে ধীরে ২ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে ইঁদুর দুর্বল হয়ে গর্তের মধ্যে মারা যায়। এখানে বিষটোপ লাজুকতা দেখা যায় না। ইঁদুর অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণী তাই প্রতিদিন একই ধরনের বিষ টোপ ব্যবহার না করে তা মাঝে মাঝে পরিবর্তন করে দিতে হবে।

৩) বিষ গ্যাসবড়ি
গ্যাস বড়ি বিষাক্ত গ্যাস উৎপন্ন করার মাধ্যমে ইঁদুর মেরে ফেলে। ইঁদুরের গর্তে বিষাক্ত অ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড বড়ি দিয়ে গর্তের মুখ ভালো করে বন্ধ করে দিলে ইঁদুর মারা যায়। ধান ক্ষেতে ইঁদুর দমনে এটি বেশ কার্যকরী। এ জন্য নতুন সচল গর্তে গ্যাসবড়ি দিয়ে আশপাশের সকল গর্তের/নালার মুখ মাটি দিয়ে শক্ত করে বন্ধ করে দিতে হবে।
আমাদের দেশের কৃষক একমাত্রা এবং দীর্ঘমেয়াদি বিষের পার্থক্য সঠিকভাবে বুঝতে পারে না। তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একমাত্রা বিষ প্রয়োগ করে, কারণ ইঁদুর মরা অবস্থায় দেখতে পাওয়া যায়। আবার একমাত্রা বিষ প্রয়োগের কারণে ইঁদুরের যে আচরণগত পরিবর্তন  (যেমন- বিষটোপ লাজুকতা) হয় সে বিষয়ে তাদের ধারণা কম। অপরদিকে দীর্ঘমেয়াদি বিষ ইঁদুর দমনে ভালো কাজ করে এবং ইঁদুর সংখ্যা কার্যকরভাবে কমিয়ে আনে, কিন্তু মরা ইঁদুর দেখতে না পওয়ায় কৃষকের কাছে ফলাফল ততটা দৃশ্যমান হয় না। কারণ বিষে আক্রান্ত ইঁদুর গর্তের ভেতরে গিয়ে মারা যায়। তাই এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

 

বিষটোপ প্রয়োগের স্থান
ইঁদুর নতুন মাটি বের করেছে এ ধরনের সচল গর্তের ভিতরে বিষটোপ দিতে হবে। একটি গর্তে অনেকগুলো মুখ থাকতে পারে, তবে যে গর্তের মুখে নতুন মাটি পাওয়া যাবে শুধু সেই গর্তের ভেতর বিষটোপ দিতে হবে। একটি গর্তে জিংক ফসফাইডের বিষটোপের একটি টুকরা (কেক) অথবা বড়ি প্রয়োগের পর গর্তের সকল মুখ ভালোভাবে বন্ধ করতে হবে। ল্যানির‌্যাট ছোট পাত্রে বা মোটা কাগজের পোটলা তৈরি করে সচল গর্তের মুখে রাখতে হবে।

 

জৈবিক পদ্ধতিতে ইঁদুর দমন
জৈবিক পদ্ধতি হলো ইঁদুর দমনে অন্য জীবের সাহায্য নেয়া। ইঁদুরভোজী প্রাণীদের রক্ষা এবং বংশবিস্তারের যথাযথ ব্যবস্থা করলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ ইঁদুর সমস্যা অনেকাংশে কমে যাবে। পেচা, শিয়াল, বেজি, বন বিড়াল, সাপ, গুঁইসাপ, বিড়াল জাতীয় প্রাণীর প্রধান খাদ্য হচ্ছে ইঁদুর। বিভিন্ন গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে একজোড়া পেচা চার মাসের একটি প্রজনন চক্রে ৪ থেকে ৬টি বাচ্চার লালন-পালনে ৫০-৭০ গ্রাম ওজনের প্রায় ৩০০০ থেকে ৫০০০ পর্যন্ত ইঁদুর ভক্ষণ করতে পারে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইসরাইল, জর্ডান, মালয়েশিয়া ও হাঙ্গেরি মাঠ ফসলের ইঁদুর দমনে পেঁচার ব্যবহার করছে। এজন্য তারা পেচার প্রাকৃতিক পরিবেশকে সংরক্ষণের পাশাপাশি এর প্রজনন ও প্রতিপালন কার্যক্রমকে কৃষক পর্যায়ে উৎসাহিত করছে। পেচার বসবাসকে উৎসাহিত করার জন্য জমিতে পেচার ঘর (ঘবংঃ নড়ী) এবং রাতে পেচা বসার জন্য টাওয়ারের ব্যবস্থা করছে এবং কাক্সিক্ষত মাত্রার সুফলও পাচ্ছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষণা মাঠের সেচ নালার ওপর দিয়ে ১৫ মিটার অন্তর অন্তর ১০-১২ ফিট উচ্চতায় পর্যবেক্ষণ টাওয়ারের (খুঁটি) ব্যবস্থা করে দেখা গেছে এতে রাতের বেলায় পেচা বসে এবং খুঁটিকে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার (ডধঃপয ঞড়বিৎ) হিসাবে ব্যবহার করে। এই পর্যবেক্ষণ টাওয়ারে রাতের বেলায় পেচা বসে মাঠের ইঁদুর নীরবে নিঃশব্দে ধরে খায় এবং দিনের বেলায় এটি পার্চিং এরও কাজ করে। বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি পেচার প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে কোন এলাকায় কোন প্রজাতির পেচা বেশি তার সঠিক তথ্য জানা নেই। অনেকে পেচাকে অলক্ষণের প্রতীক মনে করে। কিন্তু পেচা মানুষের কোন ক্ষতি করে না বরং নীরবে-নিভৃতে ইঁদুর দমন করে মাঠের ফসলকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করছে। তাই জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে তাদের সংরক্ষণ ও বংশ বিস্তারের সুযোগ করে দিতে হবে।

 

 

১,৩প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ২মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং প্রধান, কীটতত্ত্ব বিভাগ, বিআরআরআই, গাজীপুর-১৭০১, মোবাইল : ০১৭১৫০১১৩৫১, ই-মেইল :Shamiulent@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon